কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা এবং আবৃতি বাংলা
জম্ম তারিখ ২৪ মে ১৮৯৯ |
জম্মস্থন চুরুলিয়া, আসানসোল পশ্চিমবঙ্গ |
মৃত্যু ২৯ শে আগস্ট ১৯৭৬ |
সমাধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, ঢাকা, বাংলাদেশ |
কাজী নজরুল ইসলাম 1899 সালের 24 শে মে 12 জন মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়।সে স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেছিলেন কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে তিনি কবিতা নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। পরবর্তীতে তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি সঙ্গীতজ্ঞ সংগীতস্রষ্টা দার্শনিক পরিচিতি লাভ করেন।
তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমের জাতি কবিতার বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর মানসিক অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। মধ্য বয়সে তিনি পিকস ডিজিজে রোগে আক্রান্ত হয়। যার ফলে আমি আমি তাকে সাহিত্যকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণ 1972 সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশ জাতীয়তা প্রদান করা হয়। 1976 সালে 29 আগস্ট ওইখানে তিনি মৃত্যুবরণ করে।
মানুষ – কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি সামিয়ার গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়, নহে কিছু মহীয়ান
দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ নেই, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে, প্রতিটি ঘরে- ঘরে মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোলা,
খুদার ঠাকুর দাঁড়ায় দুয়ারের পূজার সময় হল!
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয়!
ছিন্ন বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ ডাকিল পান্থ দাড় খোল বাবা খাইনি ক সাতদিন!
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির ভুখারী ফিরিয়া চলে তিমির রাত্রি পথ জুড়ে তার মানিক জলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
ওই মন্দির পূজারী হায় দেবতা তোমার নয়!
মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি বাঁচিয়ে গিয়েছিল, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটকুটি!
মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্ বলে বাবা বোকা ফাঁকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা-‘ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আজ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে নামাজ পড়িস বেটা?
বুখারী কহিল না বাবা মোল্লা হাঁকিলো – তাহলে শালা সোজা পথ দেখ!
গোস্ত রুটির নিয়ে মসজিদে দিলে তালা
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলতে চলতে বলে-
আশিটা বছর কেটে গেল আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!,
কোথায় চেঙ্গিস গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে চালা হাতুড়ি শাবল চালা! হাই রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
পথ হারা – কাজী নজরুল ইসলাম
বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।
ঘরে এসো সন্ধ্যা সবাই ডাকে,
নয় তোর নয়’ বলে একা তাকে; পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানোনা সে কে তাহারে চাবে যাবে।
উদাস পথিক ভাবে।
বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
আঁদার মাথায় বিগবধুরদের কেশে,
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে –
উদাস পথিক ভাবে
বাতি আনি রাত্রী আনার প্রীতি,
বধুর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
একলা থাকার গানখানি সে গাবে
উদাস পথিক ভাবে
হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন বাঁধাই আঁধার বাঁধা কারায়,
পথ চাওয়া তার কাঁধে তারায় তারায়
আর কি পূর্বের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।
বিদায় বেলা – কাজী নজরুল
তুমি এমন করে বউ বারে বারে জল ছল ছল চোখে চেয়ো না।
জল ছল ছল চোখে চেয়ো না
ঐ কাতর গ্রন্থ থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না
শুধু বিধায়ের গান গেয়ো না,
হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা,
আজো তবে শুধু হেসে যাও আজ বিদায়ের দিনে কেদনা
ঐ ব্যাথাতুর কি আঁখি কাঁদো কাঁদো মুখ দেখি আর শুধু হেসে যাও,
আজ বিজয়ের দিন কেঁদো না।
চলার তোমার বাকী পথটুকু পথের পথিক-
হায় অমন করে অপহরণ গীতি আঁখির সলিলে ছেয়ো না,
ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।।
দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি তব ব্যাথা কেউ বুঝে না,
তোমার ব্যাথার তুমি দরদী একাকী, পথ ফিরে যারা,
কোন গৃহবাসী তারে খুঁজে না।
বুকে ক্ষত হয়ে যায় জাগে আজও সেই ব্যথা-লেখা কি?
দূর বাউলের গানের ব্যাথা হানে বুঝি শুধু ধু-ধু মাঠে প্রতীকে?
এ যে মিচে অভিমান পরবাসী দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে!
তবে জানো কি তোমার বিদায় কথায় কত বুক ভাঙা গোপন ব্যাথায়
আজ কতগুলি প্রাণ কাদিয়েছে কোথায়- পতিক!
ওগো অভিমানী দূর পথিক কেহ ভালবাসিল না ভেবেই যেন আজো মিছে ব্যাথা পেয়ে যেওনা
ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।।
নারী – নজরুল ইসলাম
সাম্যের গান গাই আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
তারা বল আদিপাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়ে রহে।
বিশ্বের যত ফুটিয়াছে ফুল ফলিয়াছে যত ফল, নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখিয়েছে, দেখিয়েছে তার প্রাণ?
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান জ্ঞানের লক্ষী, গা
নের লক্ষী শস্য লক্ষ্মী, সুষমা- লক্ষী নারী ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রোদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবস দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বধু,
পুরুষ এনেছে মরুতৃষা ল’য়ে নারী যোগায়েছে মধু।
শস্যক্ষেত্র উর্বর হলো-পুরুষ চালালো হল,
নারী সে মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বয়ে জল, সে জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।
স্বর্ণ রোপ্যভার
নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে নর পেল কবি-প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় মহি অভিযান মাতা ভগ্নী বন্ধুদের থেকে হয়েছে মহীয়ান।
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি’ কত বোন দিল সেবা।
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে শক্তি রয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।
ট্যাগ করেছে রাজ্য শাসন রাজারে শাসিছে রানি,
রানির দরদে ধুইয়া গিয়েছে রাজ্যের যত গ্লানি।
পুরুষ হৃদয়হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে অর্ধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাঁদের যশ ধরে নাক মহামানব ,বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব।
খেয়ালের বশে তাদের জন্ম দিয়েছে বিলাসী পিতা।
লব-কুশে বনে সাজিয়েছে রাম পালন করেছে সীতা।
নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষেরে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া,
দীপ্ত নয়নে পরান কাজল বেদনার ঘন ছায়া।
গাড়িয়া অদ্ভুত পুরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে করে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ।
অনুরোধ – কাজী নজরুল ইসলাম
পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া গরীবের সালামখানি লইয়া।।
কাবার জিয়ারতে আমার নাই সম্ভল ভাই, সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই রে ভািই।
মিটলো না সাধ দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।
তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিঃশ্বাসখানি নবীজির রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।
মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোনাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।
অবসর – কাজী নজরুল ইসলাম
লক্ষী আমার! তোমার পথে আজকে অভিসার,
অনেক দিনের পর পেয়েছি মুক্তি রবিবার।
দিনের-পর-দিন গেছে হয়নি আমার ছুটি,
বুকের ভিতর ব্যর্থ কাঁদন পড়ত বৃথায় লুটি
বসে ঢুলত আখি দুটি!
আহা আজ পেয়েছি মুক্ত হাওয়া
লাগল চোখের তোমার চাওয়া
তাইতো প্রাণ বাঁধ টুটেছে রুদ্র কবিতার।
তোমার তরে বুকের তলায় অনেক দিনের অনেক কথা জমা,
কানের কাছে মুখটি থুয়ে গোপন সে সব কইব প্রিয়তমা!
এবার শুধু কথায় গানে রাত্রি হবে ভোর
শুততারাতে কাঁপবে তোমার নয়ন – পাতার লোর
অভি-মানিনীরে মোর!
যখন তোমার সেধে ডাকবে বাঁশি মলিন মুখে ফুটবে হাসি,
হিম- মুকুরে উঠবে ভাসি
অরুণ ছবি তার।
(পুবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থ)
আপন-পিয়াসী – কাজী নজরুল ইসলাম
আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়,
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারি তিয়াসী বাসনায়।।
আমার মনের তৃষিত আকাশে
কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়।
আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে -স্নেহ মেঘ-শ্যাম,
অশনি আলোতে হেরি তারে থির বিজুরি উজুলি অভিরাম।।
আমারই রচিত কাননে বসিয়া
পরাণ প্রিয়ারে মালিকা রচিয়া,
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া,
আপনারই গলে দোলে হায়।।
আমাদের নারী – কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা
পুনে গরিমায় আমাদের নারী আদর্শ দুনিয়ায়।
রূপ-লাবণ্য মাধুরী ও শ্রীতে হুরী পরী লাজ পায়।।
নর নহে নারী ইসলাম পরে প্রথম আনে ঈমান,
আম্মা খাদিজা জঘতে সর্ব-প্রথম মুসলমান,
পুরুষের সব গৌরবস্নান এক এই মহিমায়।।
নবী নন্দিনী ফাতেমা মোদের সতী নারীদের রাণী,
যাঁর ত্যাগ সেবা স্নেহ ছিল মরুভূমে কওসর পানি,
যার গুণ গাতা ঘরে ঘরে প্রতি নর নারী আজে গায়।।
রহিমার মত মহিমা তার সম সতী কেবা,
নারী নয় যেন মুর্তি নেই যেন মুক্তি দরিয়া এসেছিল পতি সেবা
মোদের খাওয়ালো জগতের আলা বীরত্বে গরিমায়।।
রাজ্য শাসনের রিজিয়ার নাম ইতিহাস অক্ষয়,
আমি যদি আরব হতাম – কাজী নজরুল ইসলাম
আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ
এই পথে মোর চলে যেতেন নুর নবী হযরত।
পয়জা তাঁর লাগতো এসে আমার কঠিন বুকে
আমি ঝর্ণা হয়ে গেলে যেতাম অমনি পরম সুখে,
সেই চিহ্ন বুকে পুরে
পালিয়ে যেতাম কোহ-ই তুরে সেতা দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত
মা ফাতেমা খেলতে এসে আমার ধূলি লয়ে
আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে হাসান হোসাইন নাচতে আমার বক্ষে এসে
চক্ষে আমার বইত নদীপেয়ে সে ন্যামত ।
আমার বুকে পা ফেলে বীর আসহাব যত
রনে যেতেন দেহে আমার আঁকি মধুর ক্ষত
কুল মুসলিম আসত কাবায় চলতে পায়ে দলত আমায়
আমি চাইতাম খোদার দিদার শাফায়েত জিন্নাত।।
বিষয়শ্রেণী: ধর্মীয় চেতনার কবিতা, বিবিধ কবিতা
উম্মত আমি গুনাগার – কাজী নজরুল ইসলাম
উম্মত আমি গুনাগার
(সুন্ধু ভৈরবী কার্ফা)
উম্মত আমি গুনাগার
তবুও ভয় নাহি রে আমার
আহামদ আমার নবী
যিনি খোদ হাবিব খোদার।।
যাঁহার উম্মত হতে চাই সকল নবী,
তাহারি দামন ধরি’ পুলসিরাত হব পার।।
কাঁদিবে রোজ হাশরে সবে যবে নাফসি ইয়া নাফসি রবে,
ইয় উম্মতি বলে একা কাঁদিবেন দিবেন আমার মোখতার।।
কাঁদিবেন সাথে মা ফাতেমার ধরিয়া আরশ আল্লাহর
হোসাইনে এর খুনের বদলায় মাফী চাই পাপি সবাকার।।
দোযখ হয়েছে হারাম যেদিন পড়েছি কালেমা,
যেদিন হয়েছে আমি কোরআনের নিশান – বর্দার।।
বিষয়শ্রেণী: ধর্মীয় চেতনার কবিতা, বিবিধ কবিতা
আল্লাহ আমার প্রভু – কাজী নজরুল ইসলাম
আল্লাহ আমার প্রভু আমার নাহি ভয়
আমার নবী মোহাম্মদ যাহার তারিফ জগৎময়।।
আমার কিসের শঙ্কা
কোরান আমার ডঙ্কা
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়।।
কালিমা আমার তাবিজ তৌহিদ আমার মুর্শিদ,
ঈমান আমার ধর্ম, হেলাল আমার খুর্শিদ।
আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি
আমার জিহাদ- বাণী?
আখের মোকাম ফেরদৌস খোদার আরশ যেথায় রয়।।
আরে মেসের চীন হিন্দ মুসলিম জাহান মোর ভাই,
কেহ নয় উচ্চ কেহ নীচে, এখানে সবাই সমান।
এক দেহ এক দিল এক প্রাণ,
আমির ফকির এক সমান,
এক তাকবীরে উঠে জেগে, আমার হবে হবে জয়।।
বিষয়শ্রেণী: ধর্মীয় চেতনার কবিতা, বিবিধ কবিতা
আমি হব সকাল বেলার পাখি – কাজী নজরুল ইসলাম
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে
উঠব আমি ডাকি।
সূর্য মামা জাগার আগে
উঠব আমি জেগে,
হয়নি সকাল ঘুমোও এখন’
মা বলবেন রেগে।
বলব আমি – আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাকো,
হয়নি সকাল, তাই বলে কি
সকাল হবে নাকো?
আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে মা গো
রাত পোহাবে তবে।
বিষয়শ্রেণী: শিশুতোষ ছড়া – কবিতা, বিবিধ কবিতা
আমি যদি বাবা হতাম বাবা হত খোকা
আমি যদি বাবা হতাম বাবা হত খোকা
না হলে তার নামতা মারতাম মাতায় টোকা।।
রোজ যদি হত রবিবার
কি মজাটাই হতো যে আমার !
কেবল ছুটি ! থাকতো নাক নামতা লেখা জোকা!
থাকত না কো যুক্ত অক্ষর, অংকে ধরতে পোকা।।
কান্ডারী হুশিয়ার
কাজী নজরুল ইসলাম
দুর্গম গিরি কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি – নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার !
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছে জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সন্ত্রাসীরা সাবধান !
যুগ – যুগান্তর সঞ্চিত ব্যথা, ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে দিতে হবে অধিকার।
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ কান্ডারী !
আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি-পণ।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী ! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ !
কান্ডারি ! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার !
কান্ডারী তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর !
এই গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর !
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী ফুলিতেছে জল কান্ডারী হুশিয়ার !
বিষয়শ্রেণী: জীবনবোদের কবিতা, দেশাত্মবোধক কবিতা, প্রতিবাদী কবিতা
কবি-রাণী কাজী নজরুল ইসলাম
তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তো আমি কবি।
আমার এই রূপ সে যে তোমায় ভালোবাসার ছবি।।
আপন জেনে হাত বাড়ালো আকাশ বাতাস প্রভাত আলো,
বিদায়-বেলার সন্ধ্যা-তারা পূর্বের অরুন রবি,-
তুমি ভালবাসবে বলে ভালোবাসি সবি?
আমার আমি লুকিয়ে ছিল তোমার ভালোবাসায়,
তুমিই আমার মাঝে আসি’ আসিতে মোর বাজাও বাঁশি,
আমার পূজার যা আয়োজন তোমার প্রাণের হবি।
আমার বাণী জয়মাল্য রাণি তোমার সবি।।
তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তো আমি কবি।
আমার এই রূপ সে যে তোমায় ভালোবাসার ছবি।।
বিষয়শ্রেণী: প্রেমের কবিতা
কাজী নজরুল ইসলাম-এর কবিতা এবং আবৃত্তির পাতা – বাংলা কবিতা
> আরও পড়ুন- ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে