হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে সে খাবার গুলার তালিকা জানুন
হিমোগ্লোবিন রক্তে প্রয়োজন একটি সাধারণ সমস্যা। ভিটামিনের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন ও খনিজের অভাবের সমন্বয়ে শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি ঘটে। ছোট বড় সকলের শরীরেই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে। এই হিমোগ্লোবিনের অভাবে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি বোধ, শ্বাসকষ্ট, দূর্বল লাগার মত সমস্যা দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিনের আবার দুটি অংশ আছে – ‘হিম’ এবং ‘গ্লোবিন’। তুষারপাতের অংশে আয়রন থাকে। তাই হিমোগ্লোবিন গঠনে আয়রনের ভূমিকা অপরিহার্য। সঠিক খাদ্যাভাসে সমাধান হতে পারে। হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে চলেন জেনে নিই।
হিমোগ্লোবিন কম থাকার অর্থ কি?
এক কথায়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে কম অক্সিজেন পৌঁছায়। ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হার্টের হৃদস্পন্দন, ফ্যাকাশে ত্বকের মতো উপসর্গ দেখা যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার সমস্যাকে ‘অ্যানিমিয়া’ বা রক্তস্বল্পতা বলে।
>আরও পড়ুন- ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে দেখে নিন
মাংস: ছাগলের মাংস খেলে হিমোগ্লোবিনের অভাব দূর হবে। মাংসে আয়রন ও প্রোটিন রয়েছে। মাসিক স্টু নিয়মিত খান। এতে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। এছাড়াও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকবে।
কিশমিশ: কিশমিশেও রয়েছে অনেক উপকারিতা। প্রতিদিন সকালে একমুঠো কিশমিশ খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, আরো আছে অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও ।
ফল: হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিলে যথা সম্ভব ফল খেতে হবে স্ট্রেবেরি, পেয়ারা, আপেল ও বেদানারের মতো ফল হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। এই ফল গুলো খেলে যেমন হিমোগ্লোবিন বাড়বে, তেমনি ভাবে শারীরের একাধিক ঘাটতি পূরণ হবে। ডক্টরা প্রতিদিন একটি করে ফল নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
বাদাম: বাদাম খেলে হিমোগ্লোবিন মাত্রা বাড়ে। চাইনিজ বাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট প্রতিদিন খান। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। সুস্থ থাকার জন্য বাদাম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডিম: প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডিম খাওয়া জরুরি। এতে উচ্চ প্রোটিন এবং আয়রন রয়েছে। আরও আছে খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে। যা সকলকে একাধিক রোগ থেকে থেকে মুক্ত করে। তাই প্রতিদিন সকালে খাদ্য তালিকায় একটি করে ডিম যোগ করেন।
শুকনো ফল: শুকনো ফল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কাজু, কিসমিস, খেজুর খান এতে আছে পর্যাপ্ত আয়রন ও ভিটামিন। তাই এইগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। তাই প্রতিদিন দুপুরে এক মুঠো করে শুকনো ফল খান। আপনি চাইলে সকালেও খেতে পারেন কাজু, কিসমিস এবং খেঁজুর কোন সমস্যা হবে না।
বীট: নিয়মিত বিট খান। এ সময় বাজারে বিট পাওয়া যায়। এটি পটাসিয়াম, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন সমৃদ্ধ। এগুলো আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়ায় ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন বিট খান। বীটের জুস ও সিদ্ধ বিট খেতে পারেন।
শাকসবজি: নিয়মিত শাকসবজি খান। শরীরের একাধিক ঘাটতি দূর করতে আলু, ব্রকলি, টমেটো, কুমড়া খান। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী।
ছোলা, সয়াবিন এবং মটরশুটি: আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ছোলা, সয়াবিন এবং মটরশুটি অন্তর্ভুক্ত করুন। এই সব খাবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই সব খাবারে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সবই আছে। যা শরীরের সকল ঘাটতি পূরণ করে থাকে। তার সঙ্গে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও তৈরি করে। প্রতিদিন এ ধরনের খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে।
ওটস এবং বার্লি: আপনি ওটস এবং বার্লি খেতে পারেন। এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট এবং আয়রন। যা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। বার্লির শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এমনকি আপনি ওটসের খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া দুধ দিয়ে ওটস বানিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেট খাওয়াও উপকারী। ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকলেট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর পাশাপাশি এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি খেলে মানসিক চাপ দূর হবে।
লৌহযুক্ত খাবার: শরীরে লৌহ ঘাটতি হিমোগ্লোবিনের কম হওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লৌহ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লৌহ সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির কলিজা, কুমড়ার বীজ, ঝিনুক, ডিম, খেজুর, বেদানা, জলপাই, ডালিম, আপেল, তরমুজ, কিশমিশ ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা
উপরের উপসর্গগুলির মধ্যে একটি বা উভয়ই দেখা দিলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ‘সিবিসি’ বা ‘টোটাল ব্লাড কাউন্ট’ পরীক্ষা করে সহজেই বোঝা যায়। ভারতে রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। বিশেষ করে এদেশে প্রায় ঘরে ঘরে নারীদের মধ্যে রক্তশূন্যতার রোগ দেখা যায়।
>আরও পড়ুন- কিডনি ভালো রাখার উপায়
আয়রন রোধী খাবার
শুধুমাত্র আয়রন সমৃদ্ধ খাবারই খেলে হবেনা, এমন কিছু খাবার খাওয়ার এড়িয়ে চলা উচিত যা শরীরে আয়রন প্রবশে বাধা দেয়। অর্থাৎ পলিফেনলস, ফাইটেটস, ট্যানিন এবং অক্সালিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাই চা, কফি, কোকো, সয়া পণ্য, কোলা ফুড, ওয়াইন, বিয়ার, অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।
রক্তশূন্যতার লক্ষণগুলো কী কী?
- শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে ত্বক ফ্যাকাশে দেখায়। এ ছাড়া কারো শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে মুখ, মাড়ি, ঠোঁট, চোখের নিচের পাতা ও নখও ফ্যাকাশে দেখায়।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। তাহলে ত্বক, চুলের ক্ষতি হতে পারে। ফলে শুষ্ক ত্বক, চুল পড়া এবং ভঙ্গুর নখ।
- শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
>আরও পড়ুন- গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়