গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। আর এর যন্ত্রণা কতটা অস্বস্তিকর তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন। গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গগুলো হল পেটে জ্বালা পোড়া , বদহজম, বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, খাওয়ার পর উপরের পেটে পূর্ণতা অনুভব করা ইত্যাদি। সময়মতো খাবার না খাওয়া, বেশি ভাজা খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। , পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া। জেনে নিন গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়।
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ কী?
পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক অন্যতম। পরিপাকতন্ত্রের প্রধান কাজ হল বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রসের মাধ্যমে আমরা যে খাবার খাই তা ভেঙে ফেলা এবং হজম করা। হজম মানে হজম নালী থেকে রক্তে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙ্গে ফেলা।
আর যখন আমাদের পরিপাকতন্ত্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাদ্য হজম এই প্রক্রিপরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক হলো অন্যতম। পরিপাকতন্ত্রের প্রধান কাজ হল বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রসের মাধ্যমে আমরা যে খাবার খাই তা ভেঙে ফেলা এবং হজম করা। হজম মানে হলো থেকে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙ্গে ফেলা। [গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়]য়াটি সঠিকভাবে করতে পারে না, তখন আমাদের পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়; যাকে মূলত আমরা গ্যাস্ট্রিক বলে জানি। বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের কারণে উপসর্গ দেখা দেয় যেমন গলা ব্যথা, কর্কশ হওয়া, বুকে বা পিঠে ব্যথা এবং কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা।
>আরও পড়ুন- গ্যাস্ট্রিকে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন নয়
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার পিছনে কিছু খারাপ অভ্যাস আছে:
- সকালে আমরা দেরি করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করা।
- খুব বেশি ভাজা-পোড়া বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়া।
- দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
- মশলাদার খাবার খাওয়া
- অত্যধিক অ্যালকোহল পান করা
গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
আদা: আদা খুবই কার্যকরী, প্রদাহরোধী খাবার। পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা পিষে লবণ দিয়ে খান, গ্যাসের সমস্যা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
রসুন: অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুনের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
ডাবের পানি: ডাবের পানি খেলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং সব খাবার খুব সহজে হজম হয়। এছাড়া নিয়মিত বোতলজাত পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন বোতলজাত পানি পান করার চেষ্টা করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরায় উপস্থিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খনিজ এটা এক দিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি ভাবে হজম শক্তির অবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরার উপাদান পেটে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত অ্যাসিডের কার্যকারি ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিডির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে মধ্যে আসে।
পুদিনা পাতার পানি: গরম পানিতে পুদিনা পাতা সিদ্ধ করলে পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব দূর হয়।
পানি: পানি পান করার উপকারিতা কি তা সবারই জানে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করলে, দেখবেন সারাদিন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সহ্য করতে হবে না। পানি হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া পানি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে ও কাজ করে। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত।
দই: প্রতিদিন ২/৩ চা চামচ দই খান। দইয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া যেমন ল্যাকটোব্যাসিলাস, অ্যাসিডোফিলাস এবং বিফিডাস। এই সমস্ত উপকারী ব্যাকটেরিয়া খাবার দ্রুত হজম করার পাশাপাশি খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই দই খেলে হজমশক্তির উন্নতি ঘটে এবং গ্যাস কমায়। তাছাড়া দই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ জন্য খাবারের পর দই খাওয়া খুবই কার্যকরী।
কলা: যারা অত্যধিক লবণ খেয়ে থাকেন তাদের গ্যাস এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। কলাতে পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে। কলা হজমে সাহায্য করে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
পেঁপে: পেঁপেতে আছে প্যাপেইন নামক এনজাইম যা হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। তাই নিয়মিত পেঁপে খেলে গ্যাসের সমস্যা কিছুটা কমবে।
আনারস: আনারসে 85 শতাংশ জল এবং ব্রোমেলাইন নামক একটি প্রাকৃতিক পাচক এনজাইম রয়েছে, যা একটি অত্যন্ত কার্যকর পাচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে। এছাড়া আনারস ত্বকের জন্যও অনেক উপকারী।
হলুদ: সব ধরনের হজমের সমস্যা সমাধানে হলুদ খুবই কার্যকরী। এটি চর্বিযুক্ত খাবার হজমে সাহায্য করে।
শসা: পেট ঠান্ডা রাখতে শসা খুবই কার্যকরী। এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা গ্যাসের সমস্যা কমায়।
আলুর রস: গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধের অন্যতম সেরা উপায় হল আলুর রস। আলুর ক্ষারীয় উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উপসর্গ প্রতিরোধ করে। ১ বা ২টি গ্রেট করুন। গ্রেট করা আলু থেকে রস বের করুন। এরপর আলুর রসের সঙ্গে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এই পানীয় দিনে 3 বার পান করুন। প্রতিটি খাবারের 30 মিনিট আগে আলুর রস খান। তবে এই পানীয়টি অন্তত ২ সপ্তাহ পান করুন।
জিরা: পেটের গ্যাস দূর করতে জিরা খুবই কার্যকরী। আখের গুড়ের সাথে 50 গ্রাম জিরা মিশিয়ে 10 গ্রাম করে পাঁচটি করে বড়ি তৈরি করুন। এই তিনবার করলে গ্যাসের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
>আরও পড়ুন- ই পাসপোর্ট অনলাইন চেক
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের নাম
গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ ওষুধগুলির মধ্যে একটি রেনিটিডিন। রেনিটিডিন সাধারণত পেটে গ্যাসের সমস্যার দূর করার জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়া অথবা চিকিৎসকে পরামর্শ অনুযায় খাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি এফডিএ রেনিটিডিন ওষুধ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে। তারা বলেন, রেনিটিডিন দীর্ঘ সময় নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্রহণ করলে ক্যান্সার হতে পারে। তবে, মানবদেহে এর প্রতিক্রিয়া এখনও বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়নি।
তবে রেনিটিডিন ওষুধ ছাড়া ও গ্যাস্ট্রিক নিরাময় করতে আরো অনেক কার্যকারী ওষুধ মার্কেটে রয়েছে। এই ওষুধগুলো হচ্ছে সেকেলো, এক্সিলক ২০, নিউ ট্র্যাক, রাবিপ্রাজল, ইসুটিন ২০, ওর ট্র্যাক, সার্জেল, ওপি ২০, ম্যাক্সপ্রো, লোসেকটিল, ফিনিক্স ২০, এন্টারসিড, এবং ইসোমিপ্রাজল বিপি ইত্যাদি আরো অনেক ওষুধ রয়েছে।
শেষকথা
উপরে দেওয়া উল্লেখিত খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন। তাহলে দেখবেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না।অবশ্যই অনিয়মিত খাওয়া ও তৈলাক্ত ভাজা খাবার বন্ধ করতে হবে। তাহলে গ্যাস্ট্রিক ট্যাবলেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও মুক্তি পাবেন।
>আরও পড়ুন- অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম।