থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা


থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য থানকুনি পাতা আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। প্রায়ই পুকুর বা জলাশয়ে এটি পাওয়া যায়।  ল্যাটিন শব্দ centella aciatica থানকুনি পাতার আদিকাল থেকে মানুষ ব্যবহার করে এসেছি। ছোট্ট এই ব্লাকিত পাতার মধ্যে রয়েছে  ওষুদি সব রকমের গুণ। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। থানকুনি পাতা প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয়  এর ভেষজ গুণ থেকে। খাদ্য হিসেবে সরাসরি গ্রহণ করলে এটি রোগ নিরাময় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে থানকুনি পাতার বিভিন্ন ধরনের নাম হয়ে থাকে যেমন মানকি, ঢোলামানি, আদাগুণগুনি, ধূলাবেগুণ, তিতুরা, টেয়া, থুলকুড়ি এইসব নামে ডাকা হয়। তবে বর্তমানে এখন সবাই থানকুনি পাতা বলে ছিনে।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে তাহলে তার মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশই কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে আছে আরো অনেক উপকার।

থানকুনি পাতা খেলে কী হয়?

সময়ের সাথে সাথে মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগে মানুষ এখন ভেষজ উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। ভেষজ উপাদান সেবন করলে আমাদের শরীরের রক্ত ​​পরিশোধন হয়। ফলে রক্ত ​​জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমে যায়। থানকুনি পাতার নিয়মিত সেবন মানবদেহকে অক্সিজেনের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতা খেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে মনে রাখলেও, আধুনিক সময়ে এর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। শাস্ত্র অনুসারে, জুড়িডি মেলা ভার ছোট-বড় রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে আধুনিক ওষুধে, যা রোগ নিরাময় করে। কিন্তু হাজারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীর সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই বলছি, সুস্থ থাকতে প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করুন, বিশেষ করে থানকুনি পাতার উপকরিতা (Thankuni Patar Upokarita)। দেখবেন, শরীর নিয়ে কোনো চিন্তা থাকবে না বাবাজি!

থানকুনি পাতার উপকারিতা

চুল পড়ার হার কমে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নানা সময়ে সপ্তাহে দুই-তিনবার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতর পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। যার ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। চুল পড়া কমাতে অন্যভাবেও থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। সেটা কিভাবে চলুন পরিমাণগত থানকুনি পাতা নিয়ে সেটা থেতো করে নিতে হবে। তারপর সেটার সঙ্গে পরিমাণমতো তুলসী পাতা এবং আমলা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। 10 মিনিট অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে। এভাবে সপ্তাহে 2 বার ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: থানকুনি পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে উন্নত করে। যার কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতা উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান হজম সহায়ক এসিড এর ক্ষরণ যাতে ঠিকমত হয় সেদিকে নজর রাখে। যার ফলে বদহজম এবং গ্যাস অম্বলের মতো সমস্যা দূর হয়ে যায়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিক্যালস ত্বকের ভেতরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি অল্প বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

ক্ষত চিকিৎসার কাজ করে: থানকুনি পাতায় উপস্থিত স্পাইওনিন ও অন্যান্য উপকারী উপাদান এতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই এখন থেকে কোথাও কাটলে সঙ্গে সঙ্গে সামান্য থানকুনি পাতা পেঁচিয়ে সেখানে লাগান। দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমে যাবে।

কাশির প্রকোপ কমে: ২ চামচ থানকুনি পাতার রসে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে কাশি কমে যায়। আর এক সপ্তাহ খেতে পারলে তো প্রশ্নই আসে না। সেক্ষেত্রে কাশির কোনো লক্ষণ থাকবে না।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়: অসময়ে খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের জালে আটকা পড়েন? সমস্যা নেই! বাজার থেকে থানকুনি পাতা কিনুন। তবেই দেখবেন সমস্যা হাতের নাগালে চলে আসবে। আসলে, একটি ঘরোয়া প্রতিকার এই ক্ষেত্রে কাজে আসে।

চিকিৎসা কি? আধা লিটার দুধে 250 গ্রাম মিসরি এবং অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর সেই মিশ্রণটি অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে শুরু করুন। এক সপ্তাহ এভাবে করলে উপকার পাবেন।

আলসারের সমস্যায় নিরাময়: আলসারের চিকিৎসায় থানকুনি পাতা যে কোনো পেটের অসুখের জন্য খুবই ভালো। আমাশয় থেকে আলসার এই পাতার গুণে নিরাময় হয়। আর থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়। থানকুনি পাতা দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ের জন্য খুবই ভালো কাজ করে।

জ্বরের প্রকোপ কমে: ঋতু পরিবর্তনের সময় যাঁরা প্রায়ই জ্বরের ধাক্কায় কাবু হন, তাঁরা অবশ্যই থানকুনি পাতা খান! কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি ও ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরে যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।

মানসিক অবসাদ কমায়: যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য থানকুনি পাতার রস খুবই ভালো। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে যায়। ফলে দুশ্চিন্তার আশঙ্কাও কমে।

পেটের রোগের চিকিৎসায় উপকারী: সামান্য পরিমাণ আম গাছের ছাল, ১টি আনারস পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত সেবনে করলে কিছু দিনের মধ্যেই যে কোনো ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়। সেই সাথে ক্রিমির প্রকোপ কমে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক: উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়ানো ছাড়াও, নিয়মিত হাঁটা এবং সেন্টেলা পাতা খাওয়া আপনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কারণ, থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে হজমশক্তি ভালো হয়। ফলে শরীরে চর্বি জমে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না (Thankuni Pata Benefits)। এছাড়াও থানকুনি পাতার রস চুলের যত্নে খুবই উপকারী।

আমাশয়ের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়: এইক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে হবে। টানা ৭ দিন এভাবে করতে পারলেই হলো! এ ধরনের সমস্যা কমাতে থানকুনি পাতাও ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে পরিমান মতো  থানকুনি পাতা পিষে নিন। তারপর সেই রসের সাথে সামান্য চিনি মেশান। দুই চামচ এই মিশ্রণ দিনে দুবার খেলে দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা: বয়স বাড়ার সাথেও থানকুনি পাতার রস আপনাকে তরুণ রাখে। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সাথে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে পান করলে মুখের সৌন্দর্য আসে। আত্মবিশ্বাসও বাড়ে

ক্ষত নিরাময়: খেলতে গিয়ে কোনোভাবে আঘাত পেলে বা হাত কেটে গেলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে থানকুনি পাতার কোনো অংশ নেই। থানকুনি পাতা কেটে লাগালে ব্যথা কমে যাবে এবং রক্ত ​​পড়া বন্ধ হবে। এমনকি ক্ষত থেকেও সংক্রমণের ঝুঁকি নেই।

ঘুমের সমস্যা: ঘুম আসে না? রাতের পর রাত জেগে কাটে এই রকম অনেক মানুষ আছে। যাদের যাদের এই রকম ঘুমের সমস্যা হচ্ছে তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে থানকুনি পাতা ভিজিয়ে পানি পান করুন। স্নায়ু শিথিল হবে। ঘুম আসবেই নিয়মিত।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার অপকারিতা

উপকারিতার পাশাপাশি থানকুনি পাতার রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা। চলুন জেনে নিই থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে:

  • অতিরিক্ত কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খাবার খেলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। থানকুনি পাতাও এর ব্যতিক্রম নয়। অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেটের ব্যথা বাড়তে পারে।
  • লিভারের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয়। থানকুনি পাতা সেবনের ফলে তারা নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারে।
  • যারা বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করছেন তাদের থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
  • প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে মাথা ঘোরার মতো নানা সমস্যা হতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের আমবাত বা অ্যালার্জির ও খোস পাচড়ার সমস্যা হতে পারে।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি পাতার উপকারিতা দেখেছেন, এবার জেনে নিন থানকুনি পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে। থানকুনি পাতার উপকারিতা যেমন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খাওয়ার মতো, এবং কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলেও একই উপকার পাওয়া যায়। আপনি চাইলে থানকুনি পাতার পেস্ট বা বড়াও খেতে পারেন। আবার এই পাতা (থানকুনির ব্যবহার) পান করলেও একই উপকার পাওয়া যায়।

গরম ভাতের সঙ্গে থানকুনি পাতাও খেতে পারেন। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতার পেস্ট তৈরি করতে হবে (থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম)। আর তার জন্য লাগবে তিনটি থানকুনি পাতা, দুটি কাঁচা মরিচ, ১ চামচ কালোজিরা, ১ চামচ তেল এবং অল্প পরিমাণ চিনি।

প্রথমে থানকুনি পাতা ভালো করে ধুয়ে কুসুম গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। সময় হয়ে গেলে জল ছেঁকে নিন। তারপর একটি মিক্সারে থানকুনি পাতা, কালোজিরা, লবণ, চিনি এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার অল্প আঁচে এক চামচ সরিষার তেল গরম করে তাতে পেস্ট মিশিয়ে ২ মিনিট নাড়ুন। তারপর গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

আরো জানুন:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url