রাতে তারাতারি ঘুম আসার উপায় জানুন
আমাদের অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়। তারাতারি ঘুম আসার উপায় খুজে বেড়ায় অনেকেই রাতে সময়মতো ঘুমাতে যাই, কিন্তু একটুও ঘুমাতে পারি না! রাতের প্রায় অর্ধেকটা কেটে যায় বিছানায় শুয়ে ঘুমের অপেক্ষায়। এ ধরনের সমস্যা আছে এমন অনেকেই ঘুমের জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
একটি কর্মব্যাস্ত দিনের শেষে, বিছানায় গড়িয়ে দীর্ঘ ঘুম নিন। 7-8 ঘন্টা ঘুমানোর পরে, আপনি সতেজ হয়ে আবার কাজ শুরু করবেন। আমরা অনেকেই এই স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় কোথায়? বিছানায় শুয়েও অনেকেই ঘুমাতে চান না। আর স্মার্টফোনে আসক্ত হলে তো আর বলার নেই। ঘরের লাইট অফ করে স্মার্টফোনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে আরও একটু সময় নষ্ট হয়। রাতে আবার অনেকের ঘুমও ভেঙে যায়।
তারাতারি ঘুম আসার উপায়
ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করুন
ঘুমোতে যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করলে ভালো ঘুম হয়। কারণ আমাদের শরীর ক্লান্ত হলে দ্রুত ঘুম আসে। আবার একদম ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করবেন না। কারণ, আমরা যখন ব্যায়াম করি তখন আমাদের শরীরের কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সক্রিয় হয়ে ওঠে। সক্রিয় অঙ্গগুলি ক্লান্ত হতে 2-3 ঘন্টা সময় নেয়। সুতরাং, আপনি যদি ব্যায়ামের পরে গোসল করেন এবং রাতের খাবারের 2-3 ঘন্টা পরে বিছানায় যান, আপনি ঘুম আশা করতে পারেন।
নিঃশ্বাসের ব্যায়াম
প্রথমে ৪ সেকেন্ডের জন্য নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং তারপর ৭ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তারপর ৮ সেকেন্ডের জন্য মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার করার পর ঘুমাতে যান। ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ হয় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূর হয়, ফলে মন শান্ত থাকে এবং দ্রুত ঘুম আসে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এই পরিমাণনিঃশ্বাসের ব্যায়াম করলে আপনে মাত্র এক মিনিটে মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন।
ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখুন
রুক্ষ আবহাওয়ার চেয়ে ঠাণ্ডা ঘরে ঘুমানো ভালো। শোবার ঘর হতে হবে কোলাহলমুক্ত, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ। যেখানে দিনের বেলা পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে।
- বিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে যেসব কক্ষে বিকেল, সন্ধ্যা এবং রাত আলাদা করা যায় না সেখানে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যেখানে ।
- বিছানা নোংরা হওয়া উচিত নয়। কারণ নোংরা বিছানায় ছত্রাক জন্মায় যা চুলকানির কারণ হয়, ফলে ঘুম খারাপ হয়
- বেডরুমে ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখা উচিত নয় এবং ঘুমানোর আগে লাইট বন্ধ করা উচিত। কারণ এটি মনোযোগ বিমুখ করতে পারে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়া
প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ঘুমানোর পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যখনই আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান, আপনার বডি ক্লক স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই সময়টি ঘুমের জন্য সেট করবে।
একইভাবে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। কারণ প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমালে। আর রাত ১০টায় ঘুমাতে চাইলে সকাল ৬টায় উঠতে হবে। আপনি যদি সকাল 6 টার পরিবর্তে 7 বা 8 টায় ঘুম থেকে উঠেন তবে পরের দিন ঘুমের ব্যাধি শুরু হবে।
>আরও পড়ুন- পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করার নিয়ম সব দেশের
তামাক এবং অ্যালকোহল ত্যাগ করা
অ্যালকোহল মদ পান করার পরপরই ঘুম চলে আসে ঠিক। কিন্তু, প্রোডাক্টিভ ঘুম হয় না। তা ছাড়া অ্যালকোহল গ্রহণ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
ওরোব্রিন নামে একটি নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন রয়েছে। অ্যালকোহল পান করে, এই হরমোন তৈরি হয় না। স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং পরবর্তীতে ঘুমের তীব্র সমস্যা দেখা দেয়।
ক্যাফেইন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
যেসব খাবারে ক্যাফেইন আছে যেমন চা, কফি, কোকাকোলা এবং ভাজাপোড়া খাবার ঘুমানোর অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে বন্ধ করা উচিত। এগুলো গভীর ঘুমের অনুঘটক।
বই পড়া
পড়া দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার একটি কার্যকর উপায়। যদি কেউ ঘুমাতে যাওয়ার 5-10 মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে। বই পড়লে আপনি সহজেই ঘুমিয়ে পড়েন। কারণ, স্থির দৃষ্টিতে দেখলে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে ঘুম তাড়াতাড়ি আসে।
ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা
ঘুমানোর আগে মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত নয়। ডিভাইসের নীল আলো চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যার প্রভাব ঘুমের মধ্যেও থাকে। সুতরাং, ঘুমানোর 3-4 ঘন্টা আগে ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করুন।
আরও পড়ুন- তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসার সহজ সাত উপায়
যেসব খাবার খেলে ঘুম ভালো হয়
- রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেতে পারেন। এতে রাতে আপনার ঘুম ভালো হবে। দুধে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
- ডিমে ভিটামিন ডি থাকে। মস্তিষ্কের যে অংশে নিউরন নিউরনকে ঘুমাতে সাহায্য করে, ডিমে থাকা ভিটামিন ডি সেখানে কাজ করে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে ঘুমাতে অসুবিধা হয়।
- মিষ্টি আলুকে ‘ঘুমের মাসি বলা হয়। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম ঘুমাতে সাহায্য করে।
- কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমান পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। তাই কলা খেলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
- মধু সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন তৈরি করে। নিয়মিত মধু খেলে ভালো ঘুম হয়।
- লেটুস পাতায় উপস্থিত ল্যাকটুকারিয়াম ভালো ঘুমে হতে সাহায্য করে। এই পাতাগুলো গরম পানিতে সিদ্ধ করে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন।
- আখরোটে ট্রিপটোফেনও থাকে। এটি সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত দুটি আখরোট খেতে পারেন।
- কাঠবাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ও ট্রিপটোফ্যান স্নায়ু মাংসপেশীকে শান্ত করে। স্নায়ু এবং মাংসপেশী শান্ত হলে ভাল ঘুম হবে।
- সবজির স্যুপ, আপেল, বাদাম, কিশমিশ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
শেষকথা
ভালো ঘুম আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে। এই কথা কেন বললাম? কারণ, ঠিকমতো ঘুম না হলে আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, কাজে মন দিতে পারবেন না। বিশেষ মাথাব্যথার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের মতো রোগ দেখা দেবে।
সুতরাং, আপনি উপরে দেওয়া পোষ্ট অনুসরণ করে রাতে তারাতারি ঘুম আসার উপায় জানতে পেরেছেন। প্রয়োজনে শেয়ার করে প্রিয়জনকে জানাতে পারেন।